আগামী বছরের ডেঙ্গু জ্বরে প্রাণহানির পরিমাণ বেশী থাকবে !!!


                                                                  ভূমিকা

ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাস সংক্রামিত একটি রোগ যা এডিস প্রজাতির (Aedes aegypti বা Aedes albopictus) মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছাড়িয়ে  পড়ে । ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস (ডি ই এন ভি) ‘ ফ্ল্যাভিভিরিড পরিবারভুক্ত ‘  ইহা একটি ‘রইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (আর এন এ)’ ঘটিত ভাইরাস। ইহা চার প্রজাতির হয়ে থাকে , যেমন ডি ই এন ভি-১, ডি ই এন ভি -২, ডি ই এন ভি -৩ এবং ডি ই এন ভি -৪ স্বতন্ত্রভাবে দেখা যায়। অর্থাৎ একটি চক্রের মধ্যে দিয়ে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে থাকে ।

এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয় এবং বাতাস দ্বারাও ছড়ায় না।বরং  ইহা একটি ভাইরাল ট্রান্সমিটেট ডিজেজ । একে সাধারণ ভাষায় ‘হাড় ভাঙ্গা জ্বর’ বলা হয়ে থাকে বা প্রাচীন চিকিৎসা শাস্রে  কেউ কেউ পিত্ত জ্বর বলে থাকতেন ।  বিশ্বব্যাপী এই জ্বরে প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং প্রায় ২.৫ মিলিয়ন মানুষ এই রোগের ঝুঁকিতে থাকে । চীনে সর্বপ্রথম এই জ্বর ৯৯২ খৃষ্টাব্দে শনাক্ত করা হয়েছিল। ডেঙ্গূ  জ্বর ফিলিপাইনে সর্বপ্রথম ১৯৫০ সালে মহামারি আকারে দেখা দেয়। ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু জ্বরের রোগী শনাক্ত করা হয় এবং ২০০০ সালে বড় আকারে দেখা দেয়।এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে আলাদা।

এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে অথবা অন্যান্য ভাইরাসের  (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) ও ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)- সাথে ও হতে পারে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভাইরাস টাইপ-৩ দ্বারাই বেশির ভাগ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ।

 

কিভাবে ছড়ায়  ঃ

ডেঙ্গো ৩

ডেঙ্গুর ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের দেহে ছড়ায় স্ত্রী এডিস মশার মাধ্যম এবং স্ত্রী এডিস মশাই এই রোগের একমাত্র বাহক । এডিস মশার দুই রকম প্রজাতি আছে। একটির নাম এডিস ইজিপ্টি ও অপরটি এডিস এলবোপিক্টাস। তবে বাংলাদেশে  স্ত্রী এডিস ইজিপ্টি মশার দ্বারাই ৯৫%  মানুষ  ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন । কেননা এই  স্ত্রী মশার সিলিভারী গ্লেনডে  অধিক পরিমাণে  আরথোপড  (  arthropod-borne viruses) ভাইরাস থাকে এবং পরে অন্য ব্যক্তিকে কামড় দেওয়ার সময় সহজেই  সেই  ব্যক্তির শরীরে ছড়ায় যা ৮০% বেলায়  ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে । আবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে, সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্য জনে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে।

অর্থাৎ  ( ১-  ডেঙ্গু ভাইরাস বাহিত মশার কামড়ে (হরিজেন্টাল ট্রান্সমিশন), ২-  ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত মশার লার্ভার  মাধ্যমে (ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন যা মায়ের দুগ্ধ পানের মাধ্যমেই হয়ে থাকে নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে,  ৩-  ডেঙ্গ জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, সুচ অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির রক্তের সংস্পর্শে আসলে (হরিজেন্টাল ট্রান্সমিশন)।  ভাবেই ভাইরাসটি ট্যান্সমিশন হয়ে থাকে )

ডেঙ্গু ভাইরাসের রিসেম্‌টর বিদ্যমান থাকায় বানর ও শিম্পাঞ্জিতে ডেঙ্গু ভাইরাস রোগের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই বংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম। -গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা, মুরগি, কবুতর, অন্যান্য পাখি, কুকুর, বিড়াল, শূকর, গিনিপিগ ও খরগোস এদের এডিস মশা কামড় দিলেও ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা এরা কখনোই আক্রান্ত হবে না। কারণ এদের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাসের কোন রিসিপ্টর  নাই অতএব এই সকল প্রাণী ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। 

কখন কামড়ায় এবং কোথায় থাকে দেখতে কি রকম   ঃ 

এরা  যে কোন সময় কামড়াতে পারে , বিশেষ করে সকাল ও শেষ বিকেলেই একটু  বেশি কামড়ায়,  কারন তখন তাদের খাদ্যগ্রহণ করার সময়,  যেহেতু খাদ্যগ্রহনে আলো এবং তাপমাত্রার একটা প্রভাব আছে , এ ছাড়া মশা ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণী এবং দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা বাইরের গরম তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল, তাদের বৃদ্ধিও নির্ভর করে উষ্ণ তাপমাত্রার উপর বিধায় গরমে ডেঙ্গু মশা একটু বেশী কামড়ায় যদি ও কথাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয় । কেননা  ডেঙ্গু মশা যে কোন উপযোক্ত পরিবেশ পেলেই ডিম পাড়তে পারে । তবে এ কথা সত্য যে ১০ ডিগ্রী নিচের  তাপমাত্রায় ওদের বংশ বিস্থার ব্যাহত হয় কেননা মশার জীবনচক্রের যে  চারটি ধাপ আছে ( ডিম, লার্ভা , পিউপা, পূর্ণবয়স্ক মশা )তার মধ্যে প্রথম তিনটি ধাপের জন্য কোন খাদ্যের প্রয়োজন না হলে পানির প্রয়োজন যার কারণে  ওরা  আবদ্ধ পানিতে বসবাস করতেই হয়  , সে সময় শীতকাল হলেও ওরা বেঁচে থাকতে পারে এবং পানিতে থাকা শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীব খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে । পিউপার পর (টিন-এজ বয়স ) ওরা প্রজনন এবং বংশবিস্তারে বেস্ত  হয়ে পরে । শীতকালে পূর্ণবয়স্ক ডেঙ্গু মশার উপদ্রব কমে গেলেও উক্ত মশার লার্ভা ও পিউপা পানি বা অন্যান্য স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বেঁচে থাকতে পারে  বিধায় গরমের শুরু হতেই  পূর্ণ বয়স্ক মশায় রূপান্তরিত হয়ে ঝাকেঝাকে উড়তে দেখা যায় এবং পরবর্তী ২১ দিন পর  শধু মাত্র স্ত্রী মশার ডিম পাড়ার সময় এসে যায় এবং তখন তাদের  দেহে প্রোটিন এবং লিপিডেরও প্রয়োজন হয় । তখন  রক্তকে  খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে । সে কারনেই স্ত্রী এডিস মশা  হন্য হয়ে প্রাণীর রক্ত খুঁজতে থাকে  ও মানুষকে কামড়ায় ।

এডিস মশার পায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। দেহের উপরিভাগেও সাদা-কালো দাগ দেখা যায় । ওরা ৪০/৫০ মিটার দুর থেকেই মানুষের নিঃশ্বাসের সাথে কারবন্ডাই-অক্সাইডে বের হওয়ার গন্ধ ঘ্রাণরিসেপ্টর এর মাধ্যমে বুঝতে পারে । তারা  ১৯/২০ সেমি দুর থেকে ঘামের গন্ধ ও ঘামের মধ্যে যে ল্যাক্টিক এসিড থাকে তা আর্চ করেই কামড়াতে শুরু করে, সেই সাথে ইথাইল অ্যালকোহল যুক্ত কোন পারফিউম শরীরে বা কাপড়ে মাখলে এই জাতীয় মশারা আরও বেশী আকৃষ্ট হয়ে থাকে ।  অন্যদিকে গাঢ় রঙের বিশেষ করে গাঢ়কাল, গাঢ়লাল, গাঢ় সবুজ বর্ণের কাপড় পরিধান করা মানুষের দিকে বেশী আকৃষ্ট হয় ।

লক্ষণঃ

dangu 00

ডেঙ্গু এডিস প্রজাতির ভাইরাস ৪ ধরনের হয়ে থাকে। তাই ডেঙ্গু জ্বরও ৪ বার হতে পারে। যার আগে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে তিনির পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি বিদ্যমান। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই মারাত্মক ।

ইনকিউবিশন পিরিয়ড ঃ

উপসর্গসমূহের সূত্রপাত থেকে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের মধ্যবর্তী সমযম স্থায়ী হয় ৩-১৪ দিন, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হয় ৪-৭ দিন। অতএব, আক্রান্ত এলাকা- থেকে ফেরত যে  কোন ব্যাক্তির যদি ঘরে ফেরার ১৪ দিনের ভিতর  জ্বর হয় তা হলে তাকে  ও ডেঙ্গু জ্বরের সন্দেহযুক্ত আওতায় আনা দুষের কিছু নয় ।

ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে, ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর এবং হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর

১- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর বা প্রাথমিক পর্যায়  ঃ

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে  তীব্র জ্বরের সাথে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। কোন কোন সময় জ্বরের মাত্রা ১০৫ ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়। একি সাথে  মাথার সম্মুখ ভাগ ও চোখের পেছনে তিব্র ব্যথা দেখা দেয় , বিশেষ করে চক্ষু গহ্বরে ভীষণ ব্যাথা হয়েই থাকে । সেই সাথে শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় জোড়ায় যেমন-  কোমর, পিঠের অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যাথা হয়ে থাকে অনেক সময় ব্যথার মাত্রা এত তীব্র আকার ধারণ করে যে মনে হবে হাঁড় ভেঙে যাচ্ছে। সে জন্য এই জ্বরকে ‘হাড় ভাঙ্গা জ্বর’ও বলা হয়। একই সাথে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩/৪ বার বমি হতে দেখা যায় ।এরপর – জ্বরের ৪ বা ৫ দিনের ভিতর (  ১০৪/ ১০৫ ফারেনহাইট জ্বর সহ ) সারা শরীরে লালচে দানা যুক্ত অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো চামড়ায় লাল মসৃন ফুসকুড়ি অথবা গুটির মত দানা বেরোতে দেখা যায় । পাশাপাশি  অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ ,রুচি কমে যাওয়া , শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া,মুখ লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে । অথবা কার ও কার ও বেলায় বাই ফেজিক ফিভারের লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে ( ২/৩ দিন  পর আবার জ্বর আসা কে বলা হয় )

অন্যান্য জ্বরের সাথে সম্পর্ক ঃ

মনে রাখবেন ডেঙ্গু জ্বর ও চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণ  একই রকম অন্যান্য জ্বরের ও হতে পারে । যেমন,  ম্যালেরিয়া,লেপ্টোসপাইরোসিস,টাইফয়েড ফিভার, এবং মেনিনজোকোক্কাল ডিজিজে দেখা দেয় বিধায় অনেক সময়  রোগের ডায়াগনোসিস প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা চাড়া ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে নিখুঁত ভাবে বলা ঠিক নয় । এ ছাড়া বাচ্চাদের  সাধারণ সর্দি এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারাটাইটিস , হাম (বমি ও ডায়েরিয়া)  ইত্যাদি অসুখে প্রায়ই এই উপসর্গগুলি হয় তাও মাথায় রাখতে হবে  ।

২- ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর –

ডেঙ্গু ৬

ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভারকে আবার ১ থেকে ৪ টি গ্রেডে ভাগ করা হয়ে থাকে । যেমন- গ্রেড ১-  পজিটিভ টুর্নিকোয়েট টেস্টে উপস্থিতি থাকে,-   গ্রেড ২ তে  -এর উপস্থিতির ফলে ত্বক ও যে কোন জায়গা থেকে আপনাআপনি রক্তপাত হতে থাকে,  – গ্রেড ৩  হ’ল শক-এর ক্লিনিক্যাল প্রমাণ, এবং গ্রেড ৪  –এ শক এত প্রবল হয় যে রক্তের  চাপ এবং পালস সনাক্ত করা যায় না।  গ্রেড ৩  ও ৪  “ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম” নামে পরিচিত।

হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর হলে অবস্তা আরও জটিল আকার ধারণ করে। অর্থাৎ  ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের সাথে  সাথে শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন : চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সাথে, রক্ত বমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে রক্ত পড়তে পারে। মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি বা  অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একি সাথে  লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।সে সময়  রোগীর ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে । ( মূলত ২য় বার আক্রান্ত ও রক্তের প্লাজমা তরল জাতীয় অসুখের  বেলায় ঝুঁকি একটু বেশি ।

সতর্ক বানী ঃ রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হওয়া, শরীরের হাত-পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যাওয়া , প্রস্রাব কমে যাওয়া, বা  রোগী অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি । এই ক্যাটাগরিতে কিছু-কিছু রোগীর শরীরে পানি শুন্যতা দেখা দিয়ে আক্রান্ত ব্যাক্তি মাল্টি অর্গান ফেইলরের মাধ্যমে শকে চলে যায়  বিধায় অবশ্যই সে ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে স্থানান্তর করা ভাল )

কিভাবে শরীরের চামড়ার নিচে  রক্তপাত হয় ( ফিজিওলজি অনুসারে )

যখন ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা কাউকে কামড়ায় তখন মশার লালার মাধ্যমে এইডিস প্রজাতির  ভাইরাস ত্বকের ভিতর প্রবেশ করে এবং শ্বেত রক্ত কোষে প্রবেশ করে সেখানে বাসস্থান করে নেয় ।  তারপর কোষগুলি রক্তের সাথে  শরীরের সর্বত্র চলাচল করে এবং সে সময় এই ভাইরাস রক্তের মধ্যেই প্রজননকার্য চালিয়ে যায়।

ফলে শ্বেত রক্তকোষগুলি বহুসংখ্যক সিগন্যালিং প্রোটিন তৈরি করে, যেমন ইন্টারফেরন, যা অনেকগুলি লক্ষণ তৈরি করে , যেমন জ্বর, ফ্লু-এর মত উপসর্গ, এবং প্রচন্ড যন্ত্রণা। ভাইরাসটি অতিরিক্ত  সংক্রমণে ৯ গুন পর্যায়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে । যার ফলে শরীরের অনেক অঙ্গ (যেমন , যকৃত এবং অস্থিমজ্জা) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে  এবং এর ফলে রক্তস্রোত থেকে পাতলা ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলির দেওয়াল ছিদ্র হয়ে রক্ত ঝরতে থাকে, বিশেষ করে বুক ও পেটের গহ্বরে লিকেজ বেশি হয়ে থাকে   । বিপরীত দিকে সূক্ষ্ম  রক্তনালিগুলিতে কম রক্ত সংবহিত হয়ে  রক্তচাপ এত বেশি কমে যায় যে প্রয়োজনীয় অঙ্গসমূহে যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে  পারে না ( হার্ট ফেইলার ) । একই  সাথে অস্থিমজ্জা কাজ না করায় অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটসের সংখ্যা দ্রত কমতে থাকে ।এতে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায় । মূলত তখন ডেঙ্গু জ্বর কে  প্রাণ ঘাতী অসুখ বলা হয়ে থাকে ।তবে তা ২% বেলায় হয়ে থাকে । তখন যদি  যে কোন ভাবে রক্তের এই ডি-হাইড্রেশনের ভারসাম্যতা রক্ষা করা যায় ( যেমন, স্যালাইন, রক্তের অন্যচক্রিকা প্রদান  এবং উপযোক্ত খাবার-দাবার ইত্যাদির মাধ্যমে )  তাহলে ৯৮%  আসা করা যায় তৃতীয় স্থরের রোগীকে ও ভাল করার । ( সূত্র ঃ যে কোন ভাবে রক্তের সাইটোটক্সিন  মুক্ত করে  এবং কোঅ্যাগুলেশন ও ফাইব্রিনোলাইসিস সক্রিয় করে তোলা )

অণুচক্রিকা বা  Platelet কি

অণুচক্রিকা বা  Platelet হচ্ছে নিউক্লিয়াসবিহীন, গোলাকার বা ডিম্বাকার বা রড্ আকৃতির বর্ণহীন সাইটোপ্লাজমীয় চাকতি বিশিষ্ট রক্তের ক্ষুদ্রতম কোষ এতে কোন ডিএনএধারী নিউক্লিয়াস নেই, এর ব্যাস ২-৩µm এবং এর আয়ু বড়জোর ৫-৯ দিন ( অর্থাৎ  কেই রক্তের প্লাজমা দিলে তা ১০/১২  দিনে পূর্ণ হয়ে যায় )  । স্বাভাবিক মানুষের রক্তে অণুচক্রিকার হার প্রতি ১০০ মিলিলিটারে দেড় লাখ থেকে চার লাখ। বা ১৫০-৪৫০x১০^৯ প্রতি লিটার বড়দের বেলায় । এর মুল কাজ হচ্ছে  ক্ষতস্থানের রক্ত জমাট বাঁধানো , অর্থাৎ ক্ষত স্থানের রক্ত বন্ধ করা ।  ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রমণে অণুচক্রিকা হ্রাস পেয়ে হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে পরিণত হয় । আর এই রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যাওয়াকে thrombocytopenia বলে।

ডেঙ্গু জ্বরের দানা বা গুটি কি ঃ  (ফিজিওলজি ঃ)

এই লালচে দানা গুলো ত্বকে চাপ দিলে অদৃশ্য হবেনা , তার কারন  হচ্ছে ভাঙ্গা  সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলো এখানে এসে জড়িত হয়েছে আর এই দানা গুলো প্রথমে  মুখ ও নাকের মধ্যেই আবির্ভূত হতে দেখা যায়  এবং সে সময়  মিউকাস মেমব্রেন  থেকে অল্প রক্তপাতও হতে পারে যাতে প্রচন্ড  চুলকানি থাকে , এটি সাধারণতঃ দুই থেকে তিনদিন স্থায়ী হয়   অথবা আরেকরকম র‍্যাশও বেরোতে পারে ম্যাকুলোপাপুলার বা ভাস্কুলাইটিক রূপে, যার ফলে ত্বকে গুটি বেরোয়। এই পর্যায়ে তরলের অতিপ্রবাহ অবস্থা ঘটতে পারে। যদি এতে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয় তাহলে  রোগীর সচেতনতার মাত্রা হ্রাস পায়  অথবা মুর্ছা যাওয়া হতে পারে।

রোগনিরূপণ ঃ

ডেঙ্গু ৭

ডেঙ্গুর রোগনিরূপণ সাধারণতঃ ক্লিনিক্যালি ই হয়ে  থাকে , যা উপসর্গসমূহের রিপোর্ট ও শারীরিক পরীক্ষারভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে  ।

প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্য সহকারীরা বা ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসাররা যা করবেন  — যদি উক্ত এলাকায় ডেঙ্গু জ্বর  থাকে বা উক্ত রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত  অঞ্চল  থেকে এসে থাকেন তা হলে প্রাথমিক ভাবে  ধারনা করার জন্য  (  অন্যান্য ভাইরাল সংক্রামণ ডেঙ্গুর মত দেখা দেয় বিধায় ) । সম্ভাব্য রোগনিরূপণের ভিত্তি হ’ল জ্বরের সাথে সাথে নীচের যে কোন ২ টি  উপসর্গ থাকবেই :  যেমন শরীরে তীব্র ব্যাথা  বমি বমি  ভাব বা বমি এবং  র‍্যাশ । (  মনে রাখবেন এই জ্বরের ব্যাথা বা  যন্ত্রণা  হাড় ভাঙ্গা ব্যাথার মত  খুব বেশি তীব্র ব্যাথা  হয়ে থাকে  )  তখন সাথে সাথে টুর্নিকোয়েট টেস্ট  পাঁচ মিনিট ধরে (যা ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্র-এর প্রয়োগে করতে পারেন ) করে পজেটিভ মনে করলে অবশ্যই   জ্বরের ৪-৫ দিন পর রক্তের  সিবিসি এবং প্লাটিলেট কাউন্ট করাবেন তখন যদি দেখেন  প্লাটিলেট কাউন্ট কমিতেছে  দেখেন ( ১ লক্ষের অনেক কম ) তাহলে আপনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বলে মনে করতে পারেন  পারেন  (  জ্বর দেখা দেওয়ার ৪/৫ দিন  আগে রক্ত পরীক্ষা করালে ব্লাড প্লাটিলেট স্বাভাবিক দেখাবে, পজেটিভ দেখাবেনা  ) ।

তখন আপনার উচিত একজন ভাইরাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া । অথবা আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকলে একজন রেজিস্টার্ড  চিকিৎসকের পরামর্শে  ( PCR,The purpose of PCR testing to find small amounts of DNA in a sample ) ভাইরাল অ্যান্টিজেন  সনাক্তকরণ করাতে পারেন ।  যেমন , এনএস-১ এন্টিজেন, আইজি-জি ও আইজি-এম ক্যাপচার পরীক্ষা করিয়ে নিবেন ।

অথবা অ্যান্টিবডি(সেরোলজি) দ্বারা সেল কালচার বা নিউক্লিক এসিড সনাক্ত করনের  মাধ্যমে নির্ভুল ভাবে অসুখটিকে সনাক্ত করতে পারেন ।  তবে ইহা খুব ব্যয়বহুল বিধায়  শুধু মাত্র ভাইরাল এন্টিজেন টেস্ট করে আর অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন নাই ।

জেনে রাখা ভাল রক্ত পরীক্ষা করে যদি আইজি-জি এবং আইজি-এম উভয়ই পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হয় তা হলে অবশ্যই ঐ রোগী ২য় বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং  শুধু আইজি-এম পজিটিভ হলে আপনি প্রথম বার আক্রান্ত হয়েছেন মনে করবেন যদিও  ২য় বার আক্রান্তের ৯% রোগী খুব তাড়াতাড়ি ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন । সাথে রোগীর অন্য  কোন ধরনের অসুখ থাকলে বা সন্দেহ জনক মনে করলে আপনার চিকিৎসক রোগের তীব্রতা অনুসারে ব্লাড সুগার, লিভারের পরীক্ষা (  এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি )  বারোগীর  ডিআইসি জাতীয় জটিলতায় আক্রান্ত মনে করলে , সেক্ষেত্রে প্রোথ্রোম্বিন টাইম, এপিটিটি, ডি-ডাইমার ইত্যাদি পরীক্ষা করতে পারেন।

চিকিৎসা ও ব্যাবস্থাপনা ঃ

দাঙ্গুএ ৮

সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত করে  চিকিৎসা  দেওয়া হয়ে থাকে

( জেনে রাখা ভাল শতভাগ নিশ্চিত হয়ে ব্যাকটেরিয়ার মত ( এন্টিবায়োটিক্স )  ভাইরাস ধ্বংসকারী  কোন ঔষধ নাই , যাই আছে প্রতিষেধক হিসাবে ভ্যাক্সিন চাড়া আর কিছুই নাই এবং সে কারনে বলা হয়ে থাকে ডেঙ্গু রোগের সঠিক কোন ঔষধ নাই!!!)

প্রথম অবস্থায় ( ৮৩% রোগীর বেলায় )  ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে  রোগী পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায় । এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও ভাল হয়ে যায় যদি উক্ত রোগীর  রক্তের অণুচক্রিকার পরিমাণ না কমে এবং সেই সাথে শরীরে মারাত্মক ডিহাইড্রেশন না হয় তারপর ও রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই  চলতে হবে। যাতে  ডেঙ্গু ভাইরাস মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি না হয় অথবা পরবর্তী বছরে আক্রান্ত হলে তার  সঠিক ব্যাবস্থা নেওয়া যায় ।

সিমটমেটিক ঃ  ( লক্ষণ অনুসারে চিকিৎসা )

যেমন, ডেঙ্গু জ্বরের ৯৫% রোগীর চিকিৎসা মূলত শরীরের পানির সমতা রক্ষা করা ও বিশ্রামে রাখা । ( প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার তরল পানিয় জাতীয় , স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুর শরবত ইত্যাদি পান করতে দেওয়া – এতে করে রোগীর ডিহাইড্রেশন ঘটবেনা ),  শরীরের তাপমাত্রা  স্বাভাবিক করার জন্য  প্যারাসিটামল  জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন তবে কোন অবস্থাতেই শরীরের ব্যাথা নিবারণ করার জন্য  ( এন্টিকোগুলেন্টস ড্রাগস ) যেমন অ্যাসপিরিন এবং নেসিড ‘ গ্রোফের  ওষুধ বা রসুন জাতীয় ভেষজ  খাওয়ানো যাবেনা কারণ এ ধরনের গ্রোফের ঔষধ  বা ভেষজ রক্তের অণুচক্রিকার পরিমাণ হ্রাস করে  রক্ত কে তরল করে দেয়  ফলে মারাত্মক ধরনের রক্তপাত ঘটতে পারে। সে সময় ন্যাসোগ্যাস্ট্রিক ইন্টিউবেশন, ইন্ট্রামাসকুলার ইঞ্জেকশন এবং আর্টারিয়াল পাংচার এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এতে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকতে পারে । ( ওড়াল রিহাইড্রেশন থ্যারাপি )

৫ /৭  দিনের ভিতর জ্বর না কমলে রক্তের অণুচক্রিকা পরীক্ষা করে যদি লেভেল ১  বা ২  থাকে তাহলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শে আইভি স্যালাইন দেওয়া হয়ে থাকে ( মনে রাখবেন লেভেল ২ তে  ৪৮/ ৭২  ঘণ্টা পর রক্তের  অণুচক্রিকার পরিমাণ জানা ভাল যদি অবস্থার উন্নতি না হয় ।  (  ইন্ট্রাভেনাস রিহাইড্রেশন থেরাপি )

এরপর ও যদি ( সবাধারনত ৭ হতে ১৩ দিন পরেই হয়ে থাকে  ) জ্বর না কমে বরং রোগীর ডেঙ্গু হেমোরেজের লক্ষণ দেখা দেয় ( ৩% )  তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করা উচিৎ এবং সেখানে রেখে যদি রোগীর  রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ ১০ হাজারের কম হয় সেই সাথে  শরীরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে তখন  প্লাটিলেট কনসেন্ট্রেশন দেয়ার প্রয়োজন ( প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন ) হতে পারে তাও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে । জেনে রাখা ভাল  রক্তের প্লেটেলেট কাউন্ট ৭ হাজার থেকে ৪ হাজারে নেমে আসলেও যদি শরীরের রক্তপাত না ঘটে তাহলে অনেক সময় বিশেষজ্ঞরা  প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন করা থেকে বিরত থাকতে পারেন বরং সে ক্ষেত্রে প্লেটলেট ট্রান্সফিউশনে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে অন্যান্য মারাত্মক প্রাণঘাতী জটিলতা দেখা দিতে পারে । অর্থাৎ রোগীর অবস্থা বুজে আনুষঙ্গিক অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে । ( ইন্ট্রাভেনাস ব্লাড ট্র্যান্সপিউজেশন থেরাপি – তার ও কয়েকটি ধাপ আছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৪৮ ঘণ্টার ভিতর অবস্থার উন্নতি ঘটে  )

কিভাবে রক্তের অণুচক্রিকা ডেঙ্গু জ্বরের রোগীকে দেওয়া হয় ঃ

ডেঙ্গু ৯

এফেরোসিস মেশিন বা প্লাটিলেট মেশিন দ্বারা এক জন ডোনারের কাছ থেকে ২৫০মিলির মতো ব্লাড নিয়ে মেশিনে প্রসেসিং করে প্লাটিলেট বের করে ব্লাডের বাকী অংশ টুকু আবার ডোনারের শরীরে পুশ ব্যাক করে দেওয়া হয় । এই ভাবে ৬/৭বার করে,  প্রতি ধাপে ১০-১৫মি সময় লাগে। মোট ১ ঘন্টা বা ১ ঘন্টা ১৫-২০মি সময় লাগে।যিনি রক্তের অণুচক্রিকা দিয়ে থাকেন তিনি  ১০১৫ দিন পর আবার অন্য রুগীকে অনুচক্রিকা  দিতে পারেন,  কারন অণুচক্রিকার জীবন কাল ৩দিন যা / দিনে পর অনুচক্রিকা ডোনারের শরীরে তৈরি হয়ে যায়

ডেঙ্গু কাদের জন্য খুব বেশি মারাত্মক ঃ

শিশু ও ছোট বাচ্চাদের মধ্যে রোগের প্রাবল্য বেশি দেখা যায় এবং  পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বিপদের ঝুঁকি  বেশি। এ ছাড়া যাদের ক্রনিক ডায়াবিটিস ও অ্যাজমা  আছে তাদের জন্য ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হতে পারে। স্নায়ুবিক অসুখের মধ্যে ট্রান্সভার্স মায়েলিটিস এবং গুলেন-বারে সিনড্রোম এবং মারাত্মক সংক্রামণের মধ্যে হৃদপিন্ডে সংক্রমণ হয়ে হার্ট ব্লক ও  অ্যাকিউট লিভার ফেলিওর হয়ে রোগী মারা যেতে দেখা যায় ।

ভেষজ বিকল্প ব্যাবস্থা

ডাং ০১

যদি মনে করেন আপনি এই প্রথম বার  ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত তাহলে ভয় না করে নিচের ব্যাবস্থা অবলম্বনে ৯৯% নিশ্চিত  দ্রুত আরোগ্য লাভের  ।

সে জন্য প্রথমত মাথায় রাখবেন শরীরের ডি-হাইড্রেশন না হওয়ার জন্য ডি-হাইড্রেশন প্রতিরোধক খাবার একটু বেশি করে খাওয়া । যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে প্লাজমার পানি শুন্যতা থেকে রক্ষা পাবেন এবং চাইলে ব্যাথা নাশক ঔষধ সেবন করুন , অবশ্যই  এস্পিরিন ও আইব্রোফ্রোফেন গ্রোফের ঔষধ থেকে দুরে  থাকবেন  । ( চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে  জরুরী অবস্থায় শরীরে  আইভি স্যালাইন দেওয়া বাধ্যতামূলক  )

দ্বিতীয়ত রক্তের প্লাজমা বর্ধিত কারক খাবার প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা উচিৎ । কারন রক্তের প্লাজমা স্বল্পতা দেখা দিলে জরুরী অবস্থায়  প্লাজমা প্রতিস্থাপন ছাড়া আর বিকল্প রাস্থা থাকেনা বিধায় আপনার উচিৎ এ ধরনের জ্বর হলে প্লাজমা বৃদ্ধিকারক খাবারের দিকে বিশেষ মনযোগী হওয়া  । ( মনে রাখবেন  আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে রক্তের প্ল্যাটলেট বৃদ্ধি করার জন্য  প্ল্যাটলেট স্টিমুলেটিং জাতীয়  ইঞ্জেকশন  ছাড়া সরাসরি রক্ত বা প্লাজমা বৃদ্ধি করার  কোন ঔষধ নাই (PRP )  

সুত্রনুসারে রক্তের প্লাজমা বৃদ্ধি ( blood platelet count.)   করে নিম্নলিখিত উপায়ে ঃ

১- প্রোটেন সমৃদ্ধ খাবার ( মাংস,  গরুর কলিজা, ডিম, সবুজ সাগ , কাল শিম ইত্যাদি ) + ,  ২- জিঙ্ক জাতীয় খাবার ( মাশরুম, পালংশাক, ব্রোকলি, বাদাম বা  বীজ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডার্ক চকোলেট ইত্যাদি ,  ৩- ভিটামিন বি-৯ অথবা ফলেট ( Folic acid ) গাঁড় পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি, যেমন লালা  শাক, পালং শাক,  ব্রাসেলস স্প্রাউট, গরুর কলিজা, কাল শিম বীচি, ইয়েস্ট , ডিম ইত্যাদি খাবার সহ ,  ৪- সেই সাথে নিম্নোক্ত ভিটামিন জাতীয় খাবার (  ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন সি , ভিটামিন ডি ও ভিটামিন কে )  একটু বেশি খেলে রক্তের প্লাজমা  শরীর থেকে দ্রুত ঘাটতি হওয়ার কথা নয় ।

ভেষজ  ঔষধি হিসাবে যে সব ভেষজ ডেঙ্গু জ্বরে  জন্য কার্যকরী তা নিম্নরূপ 

পেঁপে পাতাঃ

পেঁপে পাতা  অল্প কিছুদিনের মধ্যে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। সেবনঃ৭-৮টি সতেজ পাতা নিয়ে মধ্যের ডাটাগুলি ফেলে দিয়ে ইহা পিশে নিন বা ব্লেন্ড করে একটি পরিস্কার কাপড়ে নিয়ে রস নিংড়ে বের করুন। ২ টেবিল চামচ পরিমান ৩ ঘন্টা অন্তর ২-৩ দিন খাওয়ান। লক্ষন বেশী দিন থাকলে আরও কয়েক দিন চালান।

বি এম জি রিসার্চ ( https://www.bmj.com/content/351/bmj.h4661/rr-4 )

Chlorophyll বা পুদিনা পাতা

গবেষণায়  দেখা যায় ৩৩% রোগীর পুদিনা পাতা নিয়মিত সেবনে করায় দ্রুত রক্তের প্লাজমা বৃদ্ধি হয়ে থাকে  এ ছাড়া  তুলসী অন্যান্য ভাইরাস জ্বরে  কার্যকরী ভেষজ। এতে জীবানু ধ্বংশকারী ক্ষমতা বিদ্যমান বিধায়  এন্টি-পাইরেটিক (জ্বর নিরোধক) ক্ষমতা ও শরীরের  ইমিউনিটিকেও বৃদ্ধি করে বলেই প্রমাণিত ।যেমন , ১০/১২  টি তুলসী পাতা আধা লিটার পানিতে জ্বাল দিয়ে  পানি যখন অর্ধেক হবে তখন নামিয়ে ছেঁকে নিন। ইহা দৈনিক কয়েক বার পান করতে দিন। এভাবে কয়েক দিন পান করতে থাকুন । রক্তের প্লাজমা বৃদ্ধি করতে ভাল ফল পাওয়ার কথা …… ..( more research is needed)

এ ছাড়া নিম পাতা ও হলুদ পাতা ভাইরাস সংক্রামণ জাতীয় অসুখে বেশ ভাল ফল দিয়ে থাকে ।

মেলাটোনিন যদি ও ইহা  একটি প্রাকৃতিক হরমোন বর্ধক ঔষধ তারপর ও রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট বৃদ্ধি করতে বেশ ভাল কাজ করে ।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে Eltrombopag, Romiplostim ইত্যাদি ড্রাগস জাতীয় ইঞ্জেকশন আছে যা শুধু মাত্র রক্তরসকে স্টিমুলেটিং করে রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধি করে । তাই প্লাজমা বৃদ্ধি করার জন্য উপযোক্ত খাবার  এবং  জরুরী অবস্থায় প্লাজমা ট্র্যান্সফার ছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে দ্রুত প্লাজমা ঘাটতি রুধ করা অসম্বভ ।

প্রতিষেধকঃ

ডেঙ্গু ১০

এখানো পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রতিরোধের ১০০% নিশ্চিত কোনো ভ্যাক্সিন নেই।তারপর ও ডেঙ্গু ভাইরাস টাইপ -১, ২, ৩, ৪ তে ৯০% কার্যকরী ভ্যাক্সিন হচ্ছে ডেংভেক্সিয়া (Dengvaxia®  TV003 vaccine,  made by Sanofi Pasteur) যা  ৩ টি ডোজে বিভক্ত এবং খুব বেশি ব্যায়বহুল ।

(3-dose series; aged 9-16 years: 0.5 mL SC x 3 doses administered 6 months apart 2.1 Dose Three doses (0.5 mL each) 6 months apart (at month 0, 6, and 12)

প্রতিরোধ (ব্যাক্তিগত ভাবে) ঃ ব্যাক্তিগত ভাবে এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উত্তম উপায় হচ্ছে মশার কামড় এড়িয়ে চলা এবং সে জন্য যা যা করতে হবে । যেমন, ঘরে মশানিরোধক স্প্রে করবেন,  গায়ে মাখার মশানিরোধক  ক্রিম জেল বা তৈল  ব্যবহার করতে পারেন। অথবা ৫/১ ভাগ রসুনের রস মিশিয়ে শরীরের যেসব স্থানে মশারা কামড়াতে পারে সেসব স্থানে স্প্রে করুন,  রসুনের রস ডেঙ্গু মশাতে বিশেষ কার্যকরী  (সব সময়  ভাল কোম্পানির ৯৯% কার্যকরী  ( Odomos methoprene, pyriproxyfen).)  ডেট সমূহ ব্যাবহার করার চেষ্টা করবেন   )

প্রাকৃতিক ভাবে চা পাতা এবং নিমের পাতা একসাথে শুকিয়ে শুকনা পাতাগুলো একটি মাটির পাত্রে রেখে অল্প কয়লা দিয়ে ধোয়ার মতো তৈরি করুন ( সাথে নাড়িকেলের আঁশ ছোট ছোট টুকরা করে শুকিয়ে দিলে আর ভাল রিজাল্ড মিলে ) ৫/৭ মিনিটের ভিতর সকল মশা চলে যাবে । সব সময় ই চেষ্টা করবেন মশারী ব্যাবহার করে ঘুমানোর ।

( জেনে  রাখে ভাল ঃ  আমরা ঘরের ভিতর যে সব স্প্রে, কয়েল ইত্যাদি ব্যাবহার  করে থাকি তা কিন্তু সরাসরি মশাকে ধ্বংস করেনা বা করার কথা ও নয় , বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এরা ৩/৪ ঘণ্টা অচেতন থাকার পর ( ৮০% )  মশা মরে যায় ।  যা আইন ও পরিবেষ গত দিক বিবেচনা করেই ঔষধ সমূহ তৈরি করে হয়ে থাকে । প্রথমতঃ  এই সব ক্যামিক্যাল উচ্চতর মাত্রায় প্রয়োগ করলে প্রথমত মানবদেহের ফুসফুসের -এল্ভিওলি ( ক্ষুদ্র বায়ু থলি ) অক্সিজেনের আদান প্রদান অকার্যকর সহ ফুসফুস জনিত মারাত্মক জঠিল অসুখ  দেখা দিয়ে থাকে । দ্বিতীয়তঃ আমাদের পরিবেশে মশা-মাছি ছাড়া ও অন্যান্য  অন্যান্য উপকারী পোকা মাকড় জাতীয় জীব ধ্বংস হয়ে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব তৈরি করবে । )

লম্বা জামা এবং প্যান্ট পরিধান কালো এবং লাল কাপড় এড়িয়ে চলবেন (  মশা সাধারণত কালো, লাল কাপড়ের প্রতি বেশি আকৃষ্ট থাকে ) , হলুদ বর্ণের আলোর ব্যবহার, (হলুদ আলোতে মশা চলাচল করতে পারে না ) ঘরের দরজা-জানালায় নেট এবং মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোএবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অঞ্চল থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করা ।

প্রতিরোধ ( সামাজিক ভাবে )

ডেঙ্গু ১২

সূত্রঃ ডেঙ্গু মশা কে নিয়ন্ত্রণ করার প্রাথমিক পদ্ধতি হ’ ডেঙ্গুমশা বৃদ্ধির পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলা

সামাজিক ভাবে ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধ না করলে কোন ভাবেই ডেঙ্গু জ্বরের মহামারামারি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্বভ নয় । সে জন্য প্রথমেই পাবলিক সচেতনা , জন সম্প্রচার সহ  লোকাল গভারনমেন্টের  ( মিউনিসিপাল )জরুরী উদ্বেগ সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন । সেই সাথে অবশ্যই কঠোর আইন প্রয়োগের ব্যাবস্থা রাখতে হবে যারা ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে ব্যারথ । অর্থাৎ যাদের বাস স্থান বা সম্পধে ডেঙ্গু মশা প্রজননের ক্ষেত্র পাওয়া যায়  ( পাবলিক হেলথ সেইফটি আইন অনুসারে ) এ জন্য যা যা প্রয়োজন।

যেমন- আক্রান্ত অঞ্চলের প্রতিটি  পাড়া, মহল্লা, বাড়ি ( বাসা ) রাস্থা ঘাট, দোকান ইত্যাদি জায়গায় চিরুনি অভিযান করে সেখান থেকে ডেঙ্গু মশা ও তার লার্ভা সহ মশার আবাসস্থল সম্পূর্ণ বিনষ্ট করতে হবে তবে অবশ্যই তা যেন স্বাস্থ্যের উপর কীটনাশকের কুপ্রভাব  না পরে এবং  একই সাথে  বায়োলজিক্যাল এজেন্টের (মশা নিধনকারী স্প্রে ) ব্যয়বহুলতার কথা মাথায় রাখতে হবে     –

বিশেষ করে – রাস্থার বা পাবলিক ফুটপাতে আবদ্ধ জলাধার  থাকলে তা মাটি দিয়ে ভরাট করা, আবদ্ধ জলাধার বড়  বা পুকুর হলে সেখানে বায়োলজিক্যাল এজেন্টে প্রয়োগ করা, বাগানের নিচ, গন শৌচাগার বা টয়লেট, পরিত্যক্ত টায়ার , শিল্প কারখানা ও অফিস আদালত, হাসপাতাল , নির্মাণাধীন দালান কোটা অথবা পরিতাত্ত বাড়ির খালি জায়গা, গাড়ির পার্কিং ইত্যাদি সকল সন্দেহজনক স্থান পরিষ্কার  সহ সেখানে পানি জমতে না দেওয়া এবং সকল  জায়গায় ই  বায়োলজিক্যাল এজেন্টে প্রয়োগ করতে হবে । মনে রাখবেন এসব বায়োলজিক্যাল এজেন্ট সবসময় কার্যকর নাও হতে পারে । আক্রান্ত অঞ্চলের বড় বড় জ্বলাসয়ে, বদ্ধ পানিতে পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে এমন ধরনের পাখি, মাছ ও বেঙ  জাতীয় প্রাণী বেশী করে উৎপাদন করা ইত্যাদি ।ক্ষেত্র বিশেষ মহা মাড়ামাড়ি আকার ধারণ করলে ইমারজেন্সি রেসপন্সের সকল ব্যাবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ ।

ব্যাক্তিগত বাসা বাড়িতেঃ জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে মশকী ডিম পাড়ে বিধায় যে কোন পানির পাত্র ( যদি ৩/৫ দিনের উপড়ে জমা থাকে ), বারান্দা, আঙিনা বা বাড়ির সকল আশপাশে পরিষ্কার পানি জমতে না দেওয়া  ,  ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা, ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, , খোলা একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনার, পোষা প্রাণির খাবার পাত্র ইত্যাদি পরিষ্কার সহ পানি জমতে না দেওয়া এবং যেখানেই ডেঙ্গু মশা অথবা তার লার্ভা পাওয়া যাবে সেখানেই  বায়োলজিক্যাল এজেন্টে প্রয়োগ করে পরিষ্কার রাখা ।

বিঃদ্রঃ এখানে বলে রাখা ভাল, যে কোন ধরনের ভাইরাল সংক্রামণ প্রতিরোধ করতে হলে উক্ত দেশ বা অঞ্চলের প্রত্যেক নাগরিকের সঠিক পদ্ধতিতে যুদ্ধের প্রস্থুতির মত অংশ গ্রহণ ও সতর্ক থাকা উচিৎ নতুবা আপনার ঘরের বারান্ধাতে এডিশ মশার লার্ভা লুকায়িত থাকলে প্রথমে আপনিই আক্রান্ত হবেন, এরপর অঞ্চল সমাজ বা দেশের মানুষরা আক্রান্ত হবে ।  কিন্তু নিজের বিবেক খাটিয়ে দেখুন সে জন্য  পরোক্ষ ভাবে আপনিই সম্পূর্ণ দায়ী।

সর্বশেষ তথ্য ও গবেষণা  ( Aedes aegypti )

ডেঙ্গু ১৩

যেহেতু ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস (ডি ই এন ভি) ‘ ফ্ল্যাভিভিরিড পরিবারভুক্ত ‘  ইহা একটি ‘রইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (আর এন এ)’ ঘটিত ভাইরাস বিধায়  সরাসরি কার্যকর কোন ধরনের ঔষধই শতভাগ কার্যকর আশা করা ঠিক নয় একমাত্র প্রতিরোধক ভ্যাক্সিন ব্যাতিত – সে জন্য সহজ মূল্যে বিতরণ যোগ্য ভ্যাক্সিন দ্রুত প্রস্তুত করা প্রয়োজন । তারপর ও যে যে পর্যায়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্বভ তাই তুলে ধরলাম ।

যদি প্রাণী বিজ্ঞানীরা উবাকিয়া জাতীয়  ব্যাকটেরিয়া ( যা বিভিন্ন কীট পতঙ্গের দেহকোষে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় ) এডিস মশার ডিমের ভিতর  ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের কে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেন, তাহলে  নতুন যে অন্যান্য ইজিপ্টিই মশার জন্ম হবে তার শরীরে এডিস ভাইরাসের জন্ম হবেনা বা সে মানুষকে কামড়ালে তার ডেঙ্গু হবার ভয় ও থাকবেনা বরং উবাকিয়া আছে এরকম কোন পুরুষ মশা যদি উবাকিয়া নেই এমন নারী মশার সাথে মিলিত হয় তাহলে তাদের ডিম থেকে বাচ্চা হয় না। এ ছাড়া যদি নারী মশার দেহে কিম্বা নারী ও পুরুষ উভয় মশার শরীরে উবাকিয়া থাকে এবং তাদের ডিম থেকে যে বাচ্চার জন্ম হবে, সেই নতুন মশাতেও উবাকিয়া থাকবে। এই পদ্ধতি শ্রীলঙ্কা, কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো ইত্যাদি দেশ গুলোতে  অসাধারণ সাফল্য ও সফল হয়েছে । ( RNA-dependent RNA polymerase – কোড NS5)

অথবা

জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মশা ল্যাবরেটরিতে জন্ম দিয়ে  তাদের কে  প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলে  ডেঙ্গু মশাকে পুরাপুরি বিনষ্ট করা সম্বভ । যা বিজ্ঞানীরা ডেঙ্গু মশার কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে (        ) উক্ত মশাকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার পর যখন সে নারী এডিস মশার সাথে মিলিত হয়ে  নতুন  যে মশার জন্ম হবে  সেবেঁচে থাকতে পারেনা । ব্রাজিল, পানামা ইত্যাদি দেশে ৯০% এডিস মশা কমানো সম্বভ হয়েছে … । ( ভাইরাল প্রোটিজ – কোড NS3)

সতর্কীকরণ ঃ  ( বাংলাদেশের বেলায় )

ডেঙ্গু ১৪

২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত  পাবলিক হেলথের সমীক্ষা অনুসারে প্রায় ৭২৭৪৫ জন  মানুষ ( ডি ই এন ভি-১ ) ডেঙ্গু মশার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তার মধ্যে ৫৫% ডেঙ্গু ভাইরাস টাইপ-৩ তে ভুক্ত ভোগী ছিলেন এবং সেখান থেকে  ৯১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে । গড় অনুপাতে মৃত্যুরসংখ্যা অনেক কম এবং তাদের মধ্যে থেকে গড়ে ৩% হেমোরেজিক পর্যায়ে ডেঙ্গুজ্বরের ২য় বা ৩য় ধাপে আক্রান্ত ছিলেন অর্থাৎ এদের মধ্যে বেশীর ভাগ রোগীই পূর্বে কোন একসময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন । এ কথা যদি সত্য হয় আর এর সাথে গ্রামীণ জনপদে ভাইরাসটি ক্রমশ বিস্থার লাভ করে তাহলে আগামী বছরে একেবারে নিম্নে হলে ও লাখ থেকে কয়েক লাখ মানুষের ডেঙ্গু জ্বর হওয়া অবাস্থব কিছু নয় এবং সেখান থেকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বারে  ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে নিজের বিবেক কে একটু খাটিয়ে দেখুন ! তবে তা থেকে রেহাই পেতে হলে  খুবি শক্ত হাতে সারা বছরই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সহ ডেঙ্গু প্রতিরোধের  ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখতে হবে এবং ডেঙ্গু সম্পূর্ণ  নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এভাবে  কম পক্ষে ৩ টি মৌসুমের প্রয়োজন তাও যদি যথাযত ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়ে যায় …।।

 

রেফেরেন্স ঃ  www.cdc.gov/dengue/training/cme/ccm/References.pdf

 

 

Leave a comment