মাসিক পূর্ব সিনড্রম (PMS ) স্ত্রীরোগ ( ৩য় পর্ব ) Dr.H.Kamaly


মাসিক শুরু হওয়ার ১০ থেকে ১৫ দিন পূর্বে যে শারীরিক, মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা দেখা দেয় , তাকেই মাসিক পূর্ব সিনড্রম বা PMS বলে । একি সাথে যদি মস্তিস্কের হাইপো – থ্যালামিক পিটিইটারি অ্যাড্রিনাল সিস্টেম দুর্বল অথবা সঠিক ভাবে কাজ না করে বরং মস্তিক্স থেকে সেরেটোনিন হরমোনের ক্ষয় বেশি হয় এবং সে কারনে মাসিক চক্রের প্রলিফেরাটিভ ফেজের (মাসিক শেষ হওয়ার পর ১০/১২ দিন ধরা হয় ) সময় যে শারীরিক ও মানসিক অশান্তি বা পরিবর্তন দেখা দেয়, ইহাকে মাসিক পূর্ব ডিস্পরিক ডিসঅর্ডার বা পিএমডিডি ( PMDD) বলা হয় ( Premenstrual Dysphoric Dysorde ) ।
রিসার্চ অনুসারে দেখা যায় মহিলাদের মাসিক পূর্ব সিনড্রম এমন একটা অসুখ যার মুল কারন চিকিৎসকরা অনেক সময় বুঝে উঠা সম্বভ হয়না বিধায় লক্ষন অনুসারে ঔষধ সেবন করে অনেক রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্বভ হয়না ।

 

pm-7

কারন ঃ
গবেষণা অনুসারে দেখা যায় ৮৫ % বেলায় নিম্নের কারন ই বেশী দায়ী — এবং ফিজিওলজির সুত্র অনুসারে প্রধান কারনের মধ্যে ৩ টি কারন ই সবচেয়ে বেশী উল্লেখ যোগ্য ।
১- নারী হরমোনের ভারসাম্যতা জনিত কারন ঃ প্রলিফেরাটিভ ফেজের (মাসিক শেষ হওয়ার পর ১০/১২ দিন ধরা হয় ) সময় ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টারন দুটি হরমোনের মধ্যে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় প্রজেস্টারন হরমোনের মাত্রা একক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে মাসিক পূর্ব সিনড্রম দেখা দেয় ( বিবাহিত ও মেনোপোজের কাছা কাছি বয়সের বেলায় বেলায় ৯৬% )
বিপরিত দিকে উক্ত মহিলা যদি অবিবাহিত ও বয়স ২০-৩০ এর ভিতরে থাকে তাহলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে –প্রজেস্টারন হরমোনের পরিমান শূন্যের কোটায় নিয়ে আসে অথবা তা নিষ্ক্রিয় থাকে বিধায় বিধায় মাসিক পূর্ব সিনড্রম দেখা দিয়ে থাকে এবং সে সময় কারও কারও বেলায় সেক্রেটরি ফেইজ কে দিরঘায়িত করে , যেমন মাসিক চক্র ২১ দিনের পরিবর্তে তা ৫/৬ দিন দেরিতে হয়ে থাকে । ( মেডিক্যাল সাইন অনুসারে একে স্বাভাবিক মাসিক চক্র বলা যায় যদি রোগীর বয়স ৩৫ এর কাছাকাছি থাকে )
গবেষণায় আর ও দেখানো হয়েছে এ ধরনের রোগিদের গর্ভ ধারন ( ডিম্ব নিশিক্তকরন ) করতে ও অনেক সময়ের প্রয়োজন ( পুরাতন রোগিদের বেলায় কম পক্ষে ৬ হতে ১১ টি মাসিক চক্রের অপেক্ষা করতে হয় ) তবে অবিবাহিতদের বেলায় সন্তান জন্ম দেওার পর তা আর থাকেনা যদি স্থায়ী ভাবে স্নায়ুবিক কোন অসুখের জন্ম বা হিমোগ্লোবিন স্বল্পতা না থাকে । মুলত সে কারনেই মেজাজের পরিবর্তন , উদ্বেগ, এবং অস্বস্তিবোধ সহ ওভারিয়ান স্টেরয়েড জাতিয় সমস্যা লেগে থাকে – ডকুমেন্টারি তথ্য অনুসারে , ৯১% বেলায় পূর্বে যে কোন একসময় অনিয়মিত মাসিক চক্রের ইতিহাস দু একটা থাকবেই । ( R theory-Dr Helal) ।

২- হাইপো – থ্যালামিক পিটিইটারি অ্যাড্রিনাল সিস্টেম দুর্বল হওয়ার কারনে (HPA) ঃ হাইপো – থ্যালামিক পিটিইটারি অ্যাড্রিনাল সিস্টেমের প্রধান কাজ হল , মস্তিস্কের সেরেবেলাম হতে নিউরোট্রান্সমিটার জনিত কারনে প্রজনন,মিজাজ বা আচরণ , যৌন আবেগ, হজম শক্তি, ইমিউনিটি শক্তি ইত্যাদি নিয়ত্রন করা -কিন্তু যদি কোন কারনে এই সিস্টেম সমুহ কাজ না করে অথবা দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় থাকে তাহলে সঠিক ভাবে নারী হরমোনের ভারসাম্যতা রক্ষা করতে পারেনা বরং মস্তিক্সের সেরেটোনিন হরমোনের ক্ষয় বৃদ্ধি করে মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা প্রিম্যান্সট্রুয়েল ডিস্পরিক ডিসঅর্ডারে চলে যায় ( premenstrual dysphoric disorder (PMDD) ।

৩- ভিটামিন পুস্টিহিনতা এবং মানসিক ভারসাম্যতা ঃ গবেষণা অনুসারে ৭৩% বেলায় ভিটামিন বি-৬ এর মাত্রারিক্ত স্বল্পতা,রক্তশূন্যতা ( হিমোগ্লোবিউনের স্বল্পতা ) , মারাত্মক পুস্টিহিনতা ( ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন,ক্যালসিয়াম , জিঙ্ক ইত্যাদি খনিজ ) অথবা অনিয়ন্ত্রিত হজম শক্তি, লবণাক্ত খাবার , ক্যাপেইন জাতীয় পানি ( চা-কপি ) ইত্যাদি কারনেই হয়ে থাকে ।
এ ছাড়া ও – বংশগত – ( যেমন মায়ের হলে মেয়ের ও হতে পারে ), পারিবারিক সহিংসতা, ভ্যাক্টিম এবং রেপ, শারীরিক ও মানসিক আঘাত, অতিরিক্ত উদ্ধেগ , মানসিক চাপ এবং ক্লান্তি , সিজোপেনিয়া এবং বিপোলার সিন্ড্রেম, ,ডিসমেনোরিয়া, ওভারিয়ান সিনড্রম , থায়রয়েড জনিত সমস্যা , অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা (IBS), মাংশপেশি জনিত বাথ ব্যাধি ইত্যাদি কারনে হতে পারে ।

 
লক্ষন ঃ ( মাসিক পূর্ব সিনড্রোমের লক্ষন প্রায় ২০০ অধিক )

pm-8
যদি নিম্নের লক্ষন সমুহের মধ্যে অন্তত ৫ টি লক্ষণ, মাসিক চক্র শুরু হওয়ার ৭ থেকে ১৩ দিন আগে দেখা দিলে অবশ্যই মাসিক পূর্ব সিন্ড্রোম বলতে পারেন । ( ৯০% বেলায় মাসিক চক্র শুরু হওয়ার ৫ দিন আগে দেখা দেয় আবার মাসিক শেষ হওয়ার সাথে সাথে তা চলে যায় )

শারীরিক উপসর্গ ( ফিজিক্যাল )
স্তন ফুলে যাওয়া এবং আবেগপ্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া ও ব্যাথা অনুভব করা , পেটের গ্যস বৃদ্ধি সহ কোষ্ঠকাঠিন্য, বা ডায়রিয়া বা অনিয়ত্রিত পায়খানা হওয়া ,*.খাবারে রুচির পরিবর্তন হওয়া বিশেষত লবণ এবং চিনি একটু বেশী খাওয়ার ইছছা বেড়ে যাওয়া ,শরীরে রস জমে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, ত্বকের সমস্যা (ব্রণ বৃদ্ধি ) , মাথা ব্যাথা এবং মাইগ্রেন (মাইগ্রেন PMS উপসর্গের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে), মাঝে মধ্যে অস্থিসন্ধি অথবা মাংসপেশীতে কামড়ানো থরপানো ইত্যাদি নানা ধরনের ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে ।

 

মানসিক ও আচরণগত উপসর্গ
দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা, .বিষন্নতা, .হঠাৎ কেঁদে ফেলা, .মেজাজ উঠা-নামা করা ( ক্রোধান্বিত ও শত্রুতা বৃদ্ধি পাওয়া ) সেই সাথে তন্দ্রাভাব, ক্লান্তি, এবং শক্তির অভাব অনুভব করা .নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের সমস্যা হওয়া, .সামাজিক কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকা (Social withdrawn), ঠিক মত সব কিছুতে মনোযোগ না দেওয়া বা অনেক কিছু সঠিক ভাবে মনে রাখতে না পারা সহ যৌন আগ্রহ এবং ইচ্ছা পরিবর্তন ( বেশির ভাগ ক্ষেতে সহবাসের অনীহাই বেশী ) যা মাসিক চক্র শেষ হওয়ার সাথে সাথে তা চলে যায় ।

 
পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ

pm-10
তেমন কোন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নাই । তারপর ও অসুখটি মারাত্মক পর্যায়ের মনে করলে চিকিৎসকরা ২/৩ মাসিক চক্রের ইতিহাস, মাসিক পূর্ব সিন্ড্রোম চার্টের সাথে মিলিয়ে মহিলা হরমোন সেক্রেশন এনালাইসিস এবং অন্যান্য পুস্টি উপাদান জানার জন্য রক্ত পরীক্ষার কথা বলতে পারেন । চাইলে আপনি নিজে নিজেই সেই চার্টের সাথে নিজের অসুখের লক্ষন মিলিয়ে অসুখটি থেকে রেহাই পেতে পারেন , মনে রাখবেন চার্টের সাথে অন্তত ৫টি লক্ষনের মিল থাকতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে পিএম এস পজেটিভ ধরে নিতে পারেন ।

 

মাসিক পূর্ব সিন্ড্রোম কি কি জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে ঃ
খাওয়া দাওয়া ও রুচির পরিবর্তন – রক্তশূন্যতা ( থায়রয়েড ডিসঅর্ডারের বেলায় হিমোগ্লোবিন স্বল্পতা ) , ডায়াবেটিস, ওভারিয়ান সিস্ট বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরানো বা পরে যাওয়ার মত অবস্থা ( অথচ ব্লাড প্রেসার ঠিক মতই থাকে ) , জন্ম নিয়ত্রন বড়ি সেবনে পার্স প্রতক্রিয়া ইত্যাদির সাথে যাদের বয়স একটু বেশী (৩৩ এর উপরে ) তাদের বেলায় স্থনে ব্যাথা, অনিদ্রা , বিনা কারনে মাথা ব্যাথা সহ মিজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন বেশী দেখা দেয় এবং গড়ে মাসিক চক্র শেষ হওয়ার পরের সপ্তাহ শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সবচেয়ে ভাল থাকে । গবেষণা অনুসারে দেখা যায় যারা পুরাতন মাসিক পূর্ব রোগী তাদের বেলায় মাইগ্রেন, হাঁপানি , ভায়েল সিন্ড্রোম, মৃগী রোগ ,multiple sclerosis ইত্যাদি থাকলে তা তখন খুব বেশী বৃদ্ধি পায় ।

 
চিকিৎসা ও ব্যাবস্থাপনা ঃ

pm-11
মাসিক পূর্ব সিন্ড্রোমের বেলায় প্রথম স্থরে চিকিৎসার তেমন কোন প্রয়োজন হয়না যদি সঠিক পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে , আয়রন , ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি , ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি-৬ জাতীয় খাবার একটু বেশী খেতে পারেন ( যেমন আটা, ওটমিল, ব্রকোলি, ফুলকফি, মাশরুম, বাদাম, সূর্যমুখী বীজ, মটরশুঁটি, কিশমিশ, কলা, লাল আলু, পালংশাক ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত )
সেই সাথে লবন চিনি, চা-কফির পরিমান একটু কম খাবেন ও প্রস্রাব বৃদ্ধিকারক খাবার ( শসা ইত্যাদি ) বেশী খাবেন । মেজাজ পরিবর্তন এবং হতাশাগ্রস্থ মনে হলে নিজ ধর্মের কর্ম ( নামাজ/ উপশনা ) , সামাজিক ও পারিবারিক উপকৃত কাজে নিজকে জড়িয়ে রাখার চেস্টা করুন এবং সেই সাথে সকালে মর্নিং ওয়াক অথবা হাল্কা ব্যায়াম করার চেস্টা করুন । কোন অবস্থাতেই বিচানায় যাওয়ার পর বই পড়া, টিভি অথবা সে জাতীয় কোন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে । বিচানায় যাওয়ার পর উক্তেজক পানীয় ( চা-কফি ) পান না করা, বিবাহিত থাকলে নিয়মের অতিরিক্ত সহবাস ও অপ্রীতিকর সহবাস থেকে বিরত থাকা উচিৎ ।

রিসার্চ ঃ হরমোনের ভারসাম্যতাজনিত কারনে হলে চিকিৎসকের পরামর্ষে মহিলা হরমোন ঔষধ সেবনে তা ঠিক হয়ে যায় অথবা পুনরায় সন্তান গ্রহন করলে তা আর থাকেনা ( যদি প্রজেস্টারন হরমোন নিষ্ক্রিয় অথবা অকার্যকর হয়ে থাকে ) অথবা যাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ইছছা না থাকে তারা নিউট্রেলাইজ জন্ম নিয়ত্রন বড়ি সেবন করলে কিছুদিন ( ৩ মাসিক চক্র ) পর তা চলে যাওয়ার কথা ।
অবিবাহিতদের বেলায় সুষম খাদ্য গ্রহন সহ উক্তেজক বা ইমোশনাল কিছু করা থেকে বিরত থাকা ( বিশেষ করে রাতের বেলায় ) সহ রুটিন মাফিক দৈনিক লেখাপড়া অথবা ধর্ম কর্ম ( নামাজ / উপাসনা ) সহ পরবর্তী অথবা আগাম দিনের কর্মসূচী নিয়ে বাস্থবভিত্তিক চিন্তাভাবনায় ব্যাস্থ থাকা উচিৎ । তারপর ও যদি তা না সারে তাহলে ( কম্বাইন্ড ) নর্মাল জন্ম নিয়ত্রন বড়ি ২৮ দিন সেবন করলে তা সেরে যাওয়ার কথা অথবা বিবাহ করার চিন্তা ভাবনা করতে পারেন । মনে রাখবেন যদি তা হরমোন প্রভাবে না হয়ে শারীরিক অন্য কোন কারনে হয়, ( যেমন থায়রয়েড হরমোনের অকার্যকরীতা , হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা, নিউরোমাসুলার জাতীয় অসুখ ইত্যাদি ) তাহলে তা বিয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় বিধায় মেনোপজের আগ পর্যন্ত সমস্যা সমুহ লেগে থাকতে পারে । ( বিস্তারিত পরবর্তী পরবে দেখুন )

 

সতর্কবাণী ঃ
মনে রাখবেন অভ্যাসগত কারনে মাসিক পূর্ব সিন্ড্রোম জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি করলে পরবর্তীতে শত চেস্টা করেও শুধু ঔষধ দিয়ে তা নির্মূল করা সম্বভ হয়না ( মেডিক্যাল রিসার্চ ) যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের ক্ষতিকারক অভ্যাস সমুহ দূর না করতে পারবেন ! এর জন্য চিকিৎসকদের কাছে না যাওয়াই ভাল । তবে শারীরিক সমস্যাজনিত কারনে অসুখটির সৃষ্টি হলে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করলে ৯৫% বেলায় তা ভাল হওয়ার কথা, যদি ও এর জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে । ( ডাঃ হেলাল )

গ্রেড বি — অসুখের লক্ষন সমুহ যদি ৬ মাসিক চক্রের উপরে চলে যায় তাহলে নিম্নের ঔষধ সেবনের পরামর্ষ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা —-
চিকিৎসকের পরামর্ম অনুযায়ী ব্যাথা থাকলে ব্যাথা নাশক ব্যথা নাশক (Nonstcroidal anti-inflammatory) যেমন — ibuprofen (Motrin, Advil), indomethacin (Indocin) ketoprofen ইত্যাদি মসিক চক্রের ৭ দিন পূর্ব থেকে সেবন করতে হয় ৪ দিন । ( বিদ্রঃ দীর্ঘ দিন এ সব ঔষধ সেবন করলে পাকস্থলীর এসিড বৃদ্ধি সহ পাকস্থলীতে আলচার হতে পারে ) । অথবা যাদের হাইপার এসিডিটি হওয়ার সম্বাভনা তাদের বেলায় Tylenol গ্রোফের ঔষধ বা প্যারাসেটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করতে পারেন ।
দুশ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্থ মনে হলে বিষন্নতা রোধী (Antidepressants) ঔষধ যেমন Fluoxetine (Prozac, Sarafem, generic), Sertraline (Zoloft, generic), Paroxetine (Paxil, generic) মাসিক চক্র শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগ থেকে ৭/১২ দিনের জন্য সেবন করতে পারেন ( এই সব ঔষধ দীর্ঘদিন সেবনে অভ্যাসে পরিনত হওয়ার সম্বাভনা আছে বিধায় চিকিৎসকের পরামর্ষ ছাড়া একনাগাড়ে দীর্ঘ দিন সেবন করা ঠিক নয় । অথবা আপনার চিকিৎসকের পরামর্ষে Disopan (Clonazepam – called anxiolytics) সেবন করতে পারেন ।

 

হরমোন জনিত ভারসাম্যতা অথবা নিষ্ক্রিয়তা হলে ঃ
হরমোন জনিত ভারসাম্যতা মনে করলে কোম্বাইন্ড জন্ম নিয়ত্রন বড়ি ( ইস্ট্রোজেন ও প্রেজেস্টারন মিশ্রিত ) একনাগাড়ে ৩ মাসিক চক্র সেবন করতে হয় – যদি হরমোন এনালাইসিস করে দেখা যায় প্রজেস্টারন হরমোন ঘাটতির কারনে মাসিক পূর্ব সিনড্রোম দেখা দিয়েছে তাহলে মিনি পিল বা প্রজেস্টারন জন্ম নিয়ত্রন বড়ি সেবন করতে পারেন ।
৯৫% পি এম ডি ডি ( premenstrual dysmorphic disorder ) রোগীর বেলায় ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্যতার ফলে অসুখটি হয়ে থাকে তারপর ও যদি উক্ত মহিলা অবিবাহিত হয়ে থাকে তাহলে একক ভাবে তখন অতিরিক্ত যৌন কামনা বা অন্যান্য কারনে ইস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধির ফলে প্রজেস্টারন হরমোন নিষ্ক্রিয় হতে পারে বিধায় বিশেষজ্ঞরা মিনি পিল সেবন করার পরামর্ষ দিতে পারেন ।
অথবা ইস্ট্রোজেন প্যাঁচ ( অর্থোইভরা ) বা ইনজেকশন গ্রহণ (Medroxy progesterone acetate ) প্রয়োগ করতে পারেন । ( বিদ্রঃ যাদের মেনোরেজিয়া বা অতিরিক্ত মাসিক স্রাব দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাদের বেলায় এ জাতীয় ঔষধ সেবন করা ঠিক নয় ।

তৃতীয় স্থরের ক্ষেত্রে ঃ
গোনাড্রট্রপিন রিলিজিং হরমোন ঃ gonadotrophin-releasing hormone (GnRH)
নতুন ভাবে প্রমানিত leuprolide acetate ( Lupron / Zoladex নামে বাজারে এসেছে ) – ড্রাগসটি টেস্টারন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোন কে নিয়ত্রন করে বিধায় পি এম এস এর ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে ফল দায়ক মনে করেন বিশেষজ্ঞরা – । ( যদিও ড্রাগসটি পুরাতন পুরাতন বয়ঃসন্ধি , ওভারিয়ান টিউমার, জরায়ুর টিস্যু বৃদ্ধি, ইত্যাদি অসুখের জন্য ইহা ব্যবাহার করা হয় ) ।
অথবা
নির্দিষ্ট কিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে – বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ত্রিত মহিলা হরমোন জনিত কারনে হলে Danazol (Danocrine) ( ড্রাগসটি একধরনের রিফাইনিং পুরুষ হরমোন হিসাবে বিবেচিত এবং যাদের রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টারল তাদের ক্ষেত্রে  ব্যাবহার  নিষেধ ) বিশেষজ্ঞরা তা সেবনে ভাল ফলদায়ক হিসাবে মনে করেন ।

 

 

শরিরের স্থূলতার লক্ষন থাকলে ঃ

pm-12
মাসিক পূর্ব সিনড্রোমের সময় যাদের শরীর হঠাৎ স্ফিত অথবা ওজন বাড়ার মত মনে হয় সে ক্ষেত্রে সল্প মেয়াদী মুত্র বর্ধক ঔষধ সেবন করা যেতে পারে যেমন , লেসিক্স ট্যাবলেট ইত্যাদি ।
লক্ষন হিসাবে যদি দেখেন মাসিক শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী ২ সপ্তাহ আগে শরীরের ওজন ২/৪ কেজি বৃদ্ধি পায় ( সাধারনত ব্রার সাইজ ৩২ থাকলে তখন ৩৪/৩৬ হয়ে সহ শরীরের জামা কাপড় খুব টাইট হয়ে যায় ) আবার মাসিক শেষ হওয়ার পর ওজন আবার কমতে থাকে এবং সে কারনে স্থন, উরু ও নিচ পেটে চাপ দিলে ব্যাথা অনুভূত হওয়া ইত্যাদি লক্ষন দেখা দিলে বিশেষজ্ঞরা খুব সতর্কতার সাথে সল্প মেয়াদী প্রস্রাব বৃদ্ধি কারক ঔষধ সেবন করার পরামর্ষ দিয়ে থাকেন । ( বিদ্রঃ মনে রাখবেন মুত্র বর্ধক ঔষধ সেবনে শরিরের পটাসিয়াম এবং মেগ্নেশিয়ামের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দেয় বা কিডনির উপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে বিধায় খুব বেশী প্রয়োজন না হলে তা এড়িয়ে চলা ভাল এবং বিকল্প হিসাবে মুত্র বর্ধক খাবার একটি বেশী খাওয়া সহ যতা যত ডায়েটের অভ্যাস করলে তা চলে যেতে পারে যেমন, লেবুর শরবত, টমেটো, শসা, কদুর বীচি , তরমুজ ইত্যাদি )

 

 

সহযোগী মেডিসিন এবং ভেষজ চিকিৎসা ঃ ( Alternative medicine )
গবেষণা অনুসারে দেখা যায় ভিটামিন সমুহের মধ্যে ভিটামিন বি-৬ মাসিক পূর্ব সিনড্রোমের জন্য সবচেয়ে ভাল একটি কার্যকরী সাপ্লিমেন্ট – সে জন্য সকল স্থরের বেলায় প্রতিদিন ১০০ মিগ্রাঃ পরিমান ভিটামিন বি-৬ ট্যাবলেট সেবন করুন । ( বিদ্রঃ যাদের আয়রন এবং ক্যালসিয়ামর ঘটতি জনিত কারনে হয়ে থাকে তাদের দীর্ঘদিন এ জাতীয় ঔষধ সেবন না করলে অন্য কোন ধরনের ঔষধ সেবনে সাময়িক কাজ হলেও পরবর্তীতে তা আবার দেখা দিবেই )
বি-৬ খাদ্য উৎস ঃ আটা, ওটমিল, ব্রকোলি, ফুলকফি, মাশরুম, বাদাম, সূর্যমুখী বীজ, মটরশুঁটি, কিশমিশ, কলা, লাল আলু, পালংশাক ইত্যাদি । এ ছাড়া অন্যান্য ভিটামিন যেমন ভিটামিন ই, বি-৩ , বি-২, ফলিক এসিড , ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি কিছুটা উপকারী ।

 

ভেষজ হিসাবে এফ ডি এ কৃতক অনুমোদিত ঃ

pm-13
যদিও অনেক ভেষজ আছে উপকৃত তারপর ও রিসার্চ এবং গবেষণা অনুসারে সাফ্রন ই মাসিক পূর্ব সিনড্রোমের জন্য সবচেয়ে উপকারী একটা ঔষধ , যা সকলের কাছে গ্রহন যোগ্য – সে জন্য ( প্রথম ও দ্বিতীয় স্থরের অসুখে ক্যাপসুল সাফ্রন ১৫ মিগ্রাঃ (capsule placebo ) প্রতিদিন দিনে দুইবার অন্তত ২ টি মাসিক চক্র পর্যন্ত সেবন করলে নিঃসন্দেহে ভাল ফল পাওয়ার আসা করতে পারেন ।
মাসিক পূর্ব সিনড্রোমে মাসিকে শুরু হওয়ার ১৪ দিন অথবা ৭ দিন আগে যাদের হাত পা জ্বালা যন্ত্রণা, কামড়ানো ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে সে জন্য ইভিনিং প্রমিজ ওয়েল ম্যাসেজ সবচেয়ে বেশী উপকারী যা অন্যান্য ম্যাসেজ মালিশে তেমন কাজ করেনা ।

 

কিছু অতিরিক্ত নিয়ম এবং উপদেশ ঃ ( রিসার্চ থেকে )
খাদ্যতালিকার দিকে একটু মনযোগী হবেন । বিশেষ করে মাসিক পূর্ব ১৪ দিন থেকে বিভিন্ন জ্যাঙ্ক খাবার ( বার্গার, ফ্রাইস ইত্যাদি ) থেকে বিরত থাকবেন, সুগার জাতীয় ড্রিংক পান করবেন না তবে ঠান্ডা পানি পান একটি বেশী করবেন ।
খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবন বা চিনি না খাওয়া এবং যে যে খাবার প্রস্রাবের মাত্রা কমায় তা থেকে বিরিত থাকা ইত্যাদি । সেই সাথে হাল্কা ব্যায়াম (পেশী শিথিল করা এবং গভীর শ্বাস গ্রহণের ব্যায়াম করতে হবে বা যোগব্যায়াম বা ম্যাসাজ করা ভাল ) , নিয়মিত সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা এবং দিনে ঘুমানোর চিন্তা ভাবনা না করা ।
হিমোগ্লোবিন স্বল্পতা বা পুস্টি জনিত অন্যান্য খনিজের অভাবে হলে নিয়মিত পুষ্টিকর ও আয়রন জাতীয় খাবার বেশী গ্রহন করা সহ একনাগাড়ে দীর্ঘদিন সে জাতীয় সাপ্লিমেন্টারী ঔষধ সেবন করার চিন্তা ভাবনা করা ।
যদি রোগী বিবাহিত হন এবং দাম্পত্য যৌন জীবনে স্বামীর যৌন স্থবিরতা চলে আসার ফলে ইস্ট্রোন হরমোনের অনাকাঙ্কিত রুপ ধারন করে সে ক্ষেত্রে উভয়য়ের খোলা মেলা আলোচনা করে চিকিৎসকের পরামর্ষে মেডিক্যাল সুত্র অনুসারে নিদ্রিস্ট কিছু ঔষধ এবং প্রক্রিয়া মেনে চললে তা অল্প দিনেই চলে যাওয়ার কথা ।
রোগী বিবাহিত না হলে সে ক্ষেত্রে গার্জিয়ানদের বিবাহ দেওার চিন্তা ভাবনা করা এবং তা না হলে চিকিৎসকের পরামর্ষে নেগেটিভ মহিলা হরমোন জাতীয় ঔষধ সেবনে সাময়িক তা ধমিয়ে রাখা যায় ( বিদ্রঃ মনে রাখবেন ! বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্ষ ছাড়া কোন অবস্তাতেই এ জাতীয় ঔষধ সেবনের চিন্তা ভাবনা করা আর নিজের যৌন জীবন ধংস করা প্রায় সমান ) । তবে আমার ব্যাক্তিগত মতে সবচাইতে উৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে নিয়মিত নিজ ধর্মীয় কর্ম কান্ড মনযোগ দেওয়া সহ সাংসারিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের দিকে একটু বেশী ধাবিত হয়ে অভ্যস্থ হতে পারলে পি এম ডি ডি থেকে রেহাই পাওয়া সম্বভ … ।

যদিও চিকিৎসার নিয়মে ট্রাকুলাইজার এবং ডিপ্রেশনাল ঔষধ সমুহ সেবনের কথা বলা হয়েছে , তারপর তা সেবন করলেও কোন অবস্থাতেই দীর্ঘদিন এক নাগাড়ে সেবন না করা ভাল নতুবা মানসিক ভারসাম্যতা তিব্র আকার ধারন করতে পারে ।
ধন্যবাদ ………………………………………।।
Version Info ঃ Created by Dr Helal Kamaly , References from – Bristol Medical University ( UK ) Harvey Simon, MD, Editor-in-Chief, Associate Professor of Medicine, Harvard Medical School; Physician, Massachusetts General Hospital. Also reviewed by David Zieve, MD, MHA, Medical Director, A.D.A.M., Inc.